|
ad728
ad728

ছদ্মবেশে রাতের আঁধারে দেশত্যাগ: সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের যাত্রা নিয়ে রহস্য

রিপোর্টারের নামঃ অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : 11-05-2025 ইং
  • 22401 বার পঠিত
ছদ্মবেশে রাতের আঁধারে দেশত্যাগ: সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের যাত্রা নিয়ে রহস্য
ছবির ক্যাপশন: অনলাইন সংগৃহীত

গণ-অভ্যুত্থানের উত্তাল সময় পার হওয়ার পরও সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নির্বিঘ্নে দেশত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছেন—তাও আবার গভীর রাতে, ছদ্মবেশে। বুধবার (৮ মে) রাত পৌনে ১টার দিকে তিনি লুঙ্গি, গেঞ্জি ও মুখে মাস্ক পরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে উপস্থিত হন। এরপর কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে তাকে বিমানবন্দরের ভেতরে ঢোকানো হয় এবং শেষ পর্যন্ত থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তাকে তুলে দেওয়া হয়। পুরো বিষয়টি ঘিরে নানা প্রশ্ন ও রহস্য তৈরি হয়েছে।

ছদ্মবেশে গোপন প্রবেশ, পোশাক পরিবর্তন গাড়িতেই
সূত্র জানায়, রাত প্রায় ১২টা ৪৫ মিনিটে আবদুল হামিদের ব্যক্তিগত গাড়িটি বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছায়। সেখানে দায়িত্বরত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গাড়ি থামিয়ে আরোহীদের পরিচয় জানতে চান। গাড়িচালক জানালার কাঁচ নামিয়ে বলেন, গাড়িতে সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবারবর্গ রয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় তাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়।

এই সময় একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হন্তদন্ত হয়ে এসে জানান, আবদুল হামিদের দেশত্যাগের অনুমোদন রয়েছে। পরে সাবেক রাষ্ট্রপতিকে ভিআইপি টার্মিনালের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়ির ভেতরেই তিনি ছদ্মবেশ ত্যাগ করে প্যান্ট-শার্ট পরেন।

নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা ছিল নীরব দর্শকের মতো
ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছানোর পর আবদুল হামিদকে বিমানবন্দরের ডেপুটি সিকিউরিটি অফিসারের (ডিএসও) কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিভিল এভিয়েশন, এভসেক ও অন্যান্য সংস্থার কিছু কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ফোনালাপে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের 'গ্রিন সিগনাল' পাওয়ার পর নিরাপত্তা তল্লাশি এড়িয়ে তাকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়।

বিশেষ সুবিধার জন্য থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইট নম্বর TG340-কে ভিআইপি টার্মিনালের কাছাকাছি আনা হয়। বিমানে ওঠার ঠিক আগে তাকে বিশেষ গাড়িতে করে ১২ নম্বর আউট-বে এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।

ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া ঘিরে প্রশ্ন
তথ্য মতে, ইমিগ্রেশনে আবদুল হামিদের নামে ইস্যুকৃত কূটনৈতিক মর্যাদার লাল পাসপোর্ট (নং D00010015) ব্যবহার করা হয়। এটি ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি ইস্যু হয় এবং মেয়াদ রয়েছে ২০৩০ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্যান্য মন্ত্রীদের লাল পাসপোর্ট ইতোমধ্যে বাতিল হলেও আবদুল হামিদের পাসপোর্ট বহাল রয়েছে—এটি ঘিরেও উঠেছে নানা প্রশ্ন।

ইমিগ্রেশনে কর্মরত একজন কর্মকর্তা বলেন, “৫ আগস্টের পর যেসব কর্মকর্তা এখানে আছেন, তাদের অনেকেই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে। তাই সাবেক রাষ্ট্রপতিকে ইমিগ্রেশনে সরাসরি হাজির করা হয়নি। এটা ছিল স্পষ্ট এড়ানোর কৌশল।”

সফরসঙ্গীদের পরিচয় ও পাসপোর্ট
আবদুল হামিদের সঙ্গে তার ছেলে রিয়াদ আহমেদ এবং শ্যালক ডা. এনএম নওশাদ খান ছিলেন। রিয়াদের সাধারণ পাসপোর্ট নম্বর B00069880, যার মেয়াদ ২০ নভেম্বর ২০৩০ পর্যন্ত। আর ডা. নওশাদের পাসপোর্ট নম্বর A07950691, যার মেয়াদ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০৩৩ পর্যন্ত।

তাদের বোর্ডিং কার্ড সংগ্রহ করেন রাজু নামের থাই এয়ারওয়েজের এক কর্মী। বোর্ডিং শেষে, আবদুল হামিদ বিমানে ওঠার কিছুক্ষণ পর তার সফরসঙ্গীদেরও বোর্ডিং অনুমতি দেওয়া হয়।

গন্তব্য ব্যাংকক, তবে টিকিট দিল্লি পর্যন্ত

সূত্র বলছে, বিমানবন্দরের কাগজপত্রে আবদুল হামিদের গন্তব্য ছিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক, কিন্তু তার টিকিট কাটা হয়েছিল দিল্লি পর্যন্ত। এ ছাড়া ১৬ জুন তার দেশে ফেরার একটি টিকিটও কনফার্ম করা রয়েছে।

লাল পাসপোর্ট নিয়ে বিতর্ক
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতিরা আমৃত্যু বিচারপতির মর্যাদা পান। আইন অনুযায়ী তাদের লাল পাসপোর্ট বাতিলের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বিধান নেই। তবে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে চাইলে তা বাতিল করা যেত। কিন্তু তার পাসপোর্ট বৈধ রাখা হয়েছে, সেটি ইঙ্গিত দেয় যে, কোনো বিশেষ কারণেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও পাসপোর্ট বাতিল সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি, বলছে অধিদপ্তর সূত্র। এর ফলে আবদুল হামিদ কূটনৈতিক মর্যাদায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়ে যাবেন।

প্রশাসনের নীরব সহযোগিতা নাকি পূর্বপরিকল্পিত অপারেশন?
বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও পুলিশের বিশেষ শাখা, এভসেক, সিভিল অ্যাভিয়েশন এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ছিলেন নীরব দর্শকের মতো। অথচ এদিন ‘উচ্চপর্যায়ের পরিদর্শন’ অজুহাতে পুরো বিমানবন্দর ঘিরে ফেলা হয় কড়া নিরাপত্তায়। সবমিলিয়ে পুরো ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত অপারেশন বলেই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গণ-অভ্যুত্থানের উত্তাপ কাটতে না কাটতেই সাবেক রাষ্ট্রপতির এই ছদ্মবেশী রাতের যাত্রা প্রশাসনিক স্বচ্ছতার ওপর বড় প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিল। জনগণের মধ্যে এর ব্যাখ্যা নিয়ে নানা গুঞ্জন ও সন্দেহ বাড়ছে। আবদুল হামিদের পাসপোর্ট বৈধ থাকা, গোয়েন্দা সংস্থার নীরবতা ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া এড়িয়ে দেশত্যাগ—সবকিছু মিলিয়ে এটি নিছক একটি যাত্রা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়ার জটিল ছায়া বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রকৃত সত্য জানতে সময়ই বলে দেবে আসল ঘটনা কী ছিল।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর

ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ad728
ad728
ফেসবুকে আমরা...
নামাজের সময়সূচী (Columbus)
জাতীয় সঙ্গীত
©সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ কালের কন্ঠস্বর | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় কালের কন্ঠস্বর